সম্প্রতি লক্ষ্মীর ভাণ্ডার প্রকল্পের আর্থিক অনুদান বৃদ্ধি করেছে রাজ্য সরকার। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘোষণা মতো এই অনুদান ৫০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১০০০ টাকা এবং ১০০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১২০০ টাকা করা হয়েছে। গত এপ্রিল মাস থেকেই বর্ধিত ভাতা পাচ্ছেন মহিলারা। তবে এরই মধ্যে এই প্রকল্প বন্ধ হয়ে যাওয়া নিয়ে একটি ভিডিয়ো ভাইরাল হয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। ভিডিওটি শেয়ার করে দাবি করা হচ্ছে যে হুগলির বিদায়ী সাংসদ তথা বিজেপি প্রার্থী বলেছেন যে লোকসভায় এ রাজ্যে ৩৫-এর বেশি আসন পেলে লক্ষ্মীর ভাণ্ডার বন্ধ করে দেওয়া হবে।
সেই ভিডিয়োতে দেখা যাচ্ছে হুগলির বিজেপি সাংসদ তথা এবারের লোকসভা ভোটের প্রার্থী লকেট চট্টোপাধ্যায় বলছেন, "বিজেপি ৩৫ আসনে জয়ী হলে আগামী ৩ মাসের মধ্যে লক্ষ্মীর ভাণ্ডার বন্ধ হবে। ১০০০ টাকা দিয়ে মানুষের মান-ইজ্জত কেনা যায় না। ভেবে চিন্তে ভোট দিন, মানে তৃণমূলকে ভোট দিন। ২৪-এর জুন মাস যাবে লক্ষ্মীর ভাণ্ডার বন্ধ করে দেব।"
উদাহরণস্বরূপ, এক ফেসবুক ব্যবহারকারী ভিডিয়োটি পোস্ট করে লিখেছেন, “বিজেপি ৩৫টি আসন পেলে লক্ষ্মীর ভান্ডার বন্ধ করে দেওয়া হবে - হুঁশিয়ারি দিলেন বিজেপি প্রার্থী লকেট চট্টোপাধ্যায়। বাংলার মা বোনেরা সিদ্ধান্ত নিন, আপনার লক্ষ্মীর ভান্ডার চাই না বিজেপি কে?” (ক্যাপশনের সব বানান অপরিবর্তিত।) এমনই একটি পোস্টের আর্কাইভ এখানে দেখা যাবে।
ইন্ডিয়া টুডে ফ্যাক্ট চেক অনুসন্ধান করে দেখেছে যে, লকেট চট্টোপাধ্যায়ের লক্ষ্মীর ভাণ্ডার বন্ধ করে দেওয়া সংক্রান্ত মন্তব্যের ভিডিয়োটি সম্পাদিত।
কীভাবে জানা গেল সত্য?
প্রথমত, লকেট চট্টোপাধ্যায়ের মতো একজন প্রভাবশালী বিজেপি নেত্রী লক্ষ্মীর ভাণ্ডার বন্ধ করে দেওয়া সংক্রান্ত কোনও মন্তব্য করে থাকলে সেই সংক্রান্ত খবর অবশ্যই নির্ভরযোগ্য সংবাদ মাধ্যগুলিতে প্রাকাশি হত। কিন্তু এ বিষয়ে আমরা আমাদের কিওয়ার্ড সার্চে এমন কোনও নির্ভরযোগ্য সংবাদ প্রতিবেদন বা তথ্য খুঁজে পাইনি। যা থেকে আন্দাজ করা যায় লকেট এহেন মন্তব্য করেছেন।
দ্বিতীয়ত, লকেট চট্টোপাধ্যায়ের লক্ষ্মীর ভাণ্ডার বন্ধ করে দেওয়া সংক্রান্ত মন্তব্যের ভিডিয়োটি সন্দেহজনক। কারণ ভিডিয়োতে তাঁকে একটি কাগজ থেকে ভাইরাল মন্তব্যটি পড়তে দেখা যাচ্ছে। তাছাড়া সেখানে তিনি প্রথমে বলছেন, তিন মাসের মধ্যে লক্ষ্মীর ভাণ্ডার বন্ধ করে দেওয়া হবে। আবার পরেই বলছেন ২৪-এর জুন মাসের পরে লক্ষ্মীর ভাণ্ডার বন্ধ করে দেব। অর্থাৎ একই তথ্যের ক্ষেত্রে তিনি দুটি আলাদা আলাদা সময় উল্লেখ করছেন। পাশাপাশি বিজেপি প্রার্থী হয়েও তাঁকে তৃণমূলকে ভোট দেওয়ার কথাও বলতে শোনা যাচ্ছে। এর থেকে অনুমান করা যায় ভিডিয়োটি ভুয়ো হলেও হতে পারে।
তবে এ বিষয়ে ১০০ শতাংশ নিশ্চিত হতে আমরা পুনরায় একাধিক কিওয়ার্ড সার্চ করি। তখন আমরা গত ১৭ মে লকেট চট্টোপাধ্যায়ের অফিশিয়াল ফেসবুক পেজে একটি ভিডিয়ো দেখতে পাই। ভিডিয়োর ক্যাপশনে তিনি লিখেছেন, “বিজেপি জিতলে নাকি লক্ষ্মীর ভান্ডার বন্ধ করে দেবে ! এইভাবে মিথ্যা প্রচার করেই ভোটে জিততে চাইছে তৃণমূল।”
সেই ভিডিয়োতে লকেট বলেছেন, তৃণমূল তাঁর নামে মিথ্যে অপপ্রচার করার লক্ষ্যে ‘এই সময়’ সংবাদপত্রের সঙ্গে ভুয়ো লিফলেট বিলি করছে। সেই লিফলেটে লেখা হয়েছে, আমি নাকি বলেছি বিজেপি ৩৫ আসনে জয়ী হলে আগামী তিন মাসের মধ্যে লক্ষ্মীর ভাণ্ডার বন্ধ হবে। তাই ভেবে চিন্তে তৃণমূলকে ভোট দিন।
তিনি আরও বলেন, আসলে তৃণমূল ২৪-এর লোকসভা নির্বাচন শেষে অর্থাৎ জুন মাস গেলেই লক্ষ্মীর ভাণ্ডার বন্ধ করে দেবে। তাই নিজেরা বিজেপির নাম নিয়ে মিথ্যে প্রচার করছে। লকেটের ফেসবুক পেজে প্রাপ্ত এই ভিডিয়োটি ভালো করে দেখলে এটি স্পষ্টভাবে বোঝা যায় ভাইরাল ভিডিয়োটি সেটিরই সম্পাদিত রূপ।
তবে আমরা কিওয়ার্ড সার্চ করার সময় গত ১৫ এপ্রিল এইসময় ডিজিটালে একটি প্রতিবেদন দেখতে পাই। সেখানে আমরা জানতে পারি কোচবিহারের একটি জনসভা থেকে বিজেপি মহিলা মোর্চার এক নেত্রী লক্ষ্মীর ভাণ্ডার বন্ধ করে দেওয়ার দবি করেন। তিনি বলেন ‘আগামী ৩ মাসের মধ্যে বন্ধ হয়ে যাবে এই লক্ষ্মীর ভাণ্ডার। আমরা ভিক্ষা চাই না, আমরা স্বনির্ভর হতে চাই। এই লোকসভা নির্বাচনে ৩৫টি আসন নিয়ে বিজেপি বাংলায় ক্ষমতায় আসার পরে এই সরকার ২০২৫ সালের মধ্যে পতন হবে।’
তবে দলীয় নেত্রীর সেই দাবি নিজেই খণ্ডন করছেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। তিনি ইতিমধ্যে জানিয়েছেন, "আমরা যে দিন ক্ষমতায় আসবো, পরের মাস থেকে অন্নপূর্ণা যোজনাতে ৩ হাজার করে টাকা দেব মা-বোন দিদিদের।"
এর থেকেই প্রমাণ হয় যে, বিজেপি মহিলা মোর্চার এক নেত্রী লক্ষ্মীর ভাণ্ডার বন্ধ করে দেওয়ার কথা বললেও লকেট চট্টোপাধ্যায় এহেন কোনও মন্তব্য করেননি। বরং তাঁর একটি ভিডিয়ো এডিট করে সোশ্যাল মিডিয়ায় ভুয়ো প্রচার করা হচ্ছে।
লকেট চট্টোপাধ্যায় বলেছেন, বিজেপি ৩৫ আসনে জয়ী হলে আগামী ৩ মাসের মধ্যে লক্ষ্মীর ভাণ্ডার বন্ধ হবে।
লকেট চট্টোপাধ্যায়ের লক্ষ্মীর ভাণ্ডার বন্ধ করে দেওয়া সংক্রান্ত মন্তব্যের ভিডিয়োটি সম্পাদিত।